আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে কোলকাতায় একটি ঘটনা ঘটে যার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মানুষ প্রতিবাদ করেছিলেন অথচ ঘটনাটি প্রতিবাদ করার মতো কিন্তু ছিল না.  প্রকাশ্যে আলিঙ্গন। এই ছিল দোষ যার জন্য সাধারণ মানুষ একটি ছেলে বেধড়ক মার্ মেরেছিল। সঙ্গে থাকা মেয়েটিও ছার পায়নি  আমজনতার হাত থেকে। প্রকাশ্যে হাত তার গায়েও উঠেছিল।

আজ সারা দেশ মেতেছে নতুন খবর নিয়ে।  কি খবর? রেপ! Ironically ব্যাপারটা মোটেও নতুন নয়. আজ কাল খবরের কাগজ খুললে কম করে হলেও অন্তত ৫টা করে রেপ এর ঘটনা রোজ সবার চোখেই পরে।

তফাৎটা  এটাই যে কিছু মেয়েরা রেপ হয়ে যাবার পর বেঁচে যায় কিন্তু প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি সেদিন আর বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারেনি।  তাকে ধর্ষণ করার পর খুন করা হয় এবং খুন করার পর আবার ধর্ষণ করা হয় , আর তারপর? তারপর তাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পেট্রল দিয়ে। এরম ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই খুব তাড়াতাড়ি মিডিয়া তে ছড়িয়ে পড়ে।  তার ওপর হায়দরাবাদ এর মতো দেশের এক অন্যতম IT HUB বলে জনগণের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হলো আর কতদিন ? কতদিন এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে? দোষীরা ধরা পড়বে হয়তো কিন্তু কঠিন শাসন ব্যবস্থার অভাব এর কারণে প্রত্যেক দিন কোনো না কোনো পিশাচ এর শিকার হবো আমরা?

এক  একটি ঘটনা এক একজন মানুষকে জাগিয়ে তোলে।  কেউ কেউ নির্ভয়ার ঘটনার পর থেকেই সতর্ক কেউ কেউ প্রিয়াঙ্কা।  প্রত্যেকটি নারী আজ কাঁদছে , রীতিমতো ভয় পাচ্ছে বাড়ির বাইরে পা রাখতে।  হায়দরাবাদ এর মতো শহর এ রাত ৯.৩০ এ যদি মেয়েরা “safe ” না হয়, তাহলে অন্য জায়গায় কি হবে?

ভারতবর্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা এত খারাপ পর্যায়ে আজ চলে গেছে , গ্রামের দিকে বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে যে ধর্ষণ হলে তার জন্য একটি মেয়ে সমান ভাবে দোষী , তারা বলছে মেয়েরা যদি কোনো ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসে , সেটা হলো ছেলেদের আকর্ষণ করা।  তা একটা ৩ মাসের শিশু কাকে আকর্ষণ করে শুনি তো? একজন ৮০ বছর এর বৃদ্ধা মা কাকে আকর্ষণ করে?

উচ্চপদস্থ নেতা নেত্রী বলে “সাজানো ঘটনা “. নিজের ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে একটা মেয়ে কি পাবে বলুন তো? ধর্ষণ করতে হলে বয়স এর কোনো “limit ” থাকে না. কিন্তু যখন শাস্তি দেওয়ার সময় আসে ? ধর্ষক এর বয়স তখন আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ! হায় রে সমাজ! তিন মাসের শিশুর ধর্ষক এর বয়স যদি ৩ বছর ও হয় , সেও ফাঁসিতে ঝোলার যোগ্য !

আজ ছেলেরা বলছে , সাহায্য করবে , রাত বিরেতে কোনো মেয়ে বিপদে পড়লে তার পাশে এসে দাঁড়াবে।  কিন্তু কেউ এটা বলছেনা যে রাত বিরেতে কোনো মেয়ে বিপদে পরবে না।

আজকাল রাস্তায় বেরোলে মাঝে মাঝে কুকুর গুলো পাশে থেকে “guard ” করে নিয়ে যায়, মানুষরূপী পিশাচগুলো কিন্তু সেই লোলুপ দৃষ্টি তে  তাকিয়ে থাকে।  যে সমাজ বলে যে “ধর্ষণ একটা সাধারণ ঘটনা এবং এটা নিয়ে এত বেশি আলোচনা করার কোনো কারণ নেই ” তাদের বলি নিজের মা বোনকে সাবধানে রাখবেন।  সাধারণ ঘটনা তো ! তাদের সাথেও ঘটতেই পারে তাই না?

হ্যাঁ! আমরা সেই সমাজে বাস করি যেখানে একটা মেয়ের ছোট পোশাক পরা একটি সাধারণ ঘটনা নয় , একটি মেয়ে কোনো পুরুষ বন্ধুর হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো ব্যাপারটা  অস্বাভাবিক , তাতে মেয়েটির চরিত্র খারাপ হয়ে যায়! আর প্রকাশ্যে আলিঙ্গন ? ফাঁসির যোগ্য তাইনা?

কিন্তু ভিড়ের সুযোগ নিয়ে মেয়েটির বুকের খাঁজে হাত দেওয়া বা কনুই মারা ? সেটা বোধহয় কিছু পুরুষের জন্মগত বা হতেও পারে বংশগত অধিকার।

প্রায় প্রত্যেকটা মেয়ে যখন বড়ো হয়, কারোর না কারোর এই অধিকারের শিকার হতেই থাকে , সমাজ এর ভয়ে মুখ খোলেনা।  আমি ? না ! আমিও ব্যতিক্রম না। সহ্য আমিও করেছি। একবার নয় , একাধিক বার।  আজও সেই নাম গুলো বলতে পারবোনা।  হ্যাঁ! ভয় আজ লাগে। রাস্তা দিয়ে রাত বিরেতে এক যাতায়াত করি তো ! যদি কেউ অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে? সাধারণ ঘটনা কিনা !

কিছু মানুষ আজ বলছে এই যে সরকার “Homosexuality legalised ” করেছে সেটাও নাকি ধর্ষণ হওয়ার কারণ ! কই ? মেয়েরা তো মেয়েদের “RAPE ” করেনা !

আমাদের মতো দেশে কিছু মানুষ এটাও বলে যে ধর্ষিতা মেয়েটিও দোষী , তাহলে ছেলেটা এক শাস্তি পাবে কেন ?

এরকম সমাজে , এরকম দেশে,সরকার আইন পাশ করবেন কি করে ?

আমাদের দেশে রক্ষক যে তিনিও ভক্ষক।  পুলিশদের কথা বলছি।  এরকম ঘটনা আমাদের অজানা নয় যেখানে পুলিশ ধর্ষক।  দুর্ভাগ্যবশত, আইন থাকলে তার ফাঁক থাকবেই।  তাই কঠিনতম আইন পাশ হলেও যারা রেহাই পাবার তারা ছাড়া পাবেই।  তাই আইন যেমন দরকার তার পাশাপাশি নিজের মানসিকতাও বদলানো দরকার।

এই ঘটনাগুলো মিডিয়ার “TRP ” বাড়ানোর ছুতো নয়।  কোনো পাবলিসিটি স্টান্ট নয়।  যাদের ভয় পাওয়া দরকার তারা “খুল্লাম খুল্লা” ঘুরে বেড়াচ্ছে।  আর ভয় পাচ্ছে কারা ? আমাদের মতো সাধারণ ঘরের মেয়েরা।

সব খবর প্রকাশ্যে আসবেনা ! ঘরে বাইরে অত্যাচারিত মেয়েদের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবেনা।  শাস্তি সবাই পাবেনা।

গতকাল যখন ধর্ষকদের “encounter ” এ গুলি করে মারা হয়, কিছু সম্মানীয় ব্যক্তি বলে “Political game “. বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষকরা শাস্তি পাবেনা, কারণ সব পুলিশ অফিসার সমান হয়না। নিঃসন্দেহে কালকের ঘটনা একটি অনবদ্য এবং প্রশংসনীয় ঘটনা যা সচরাচর ঘটেনা। আজ সারা দেশে “fast track court ” তৈরী হচ্ছে , কিন্তু তাতে কয়জন মেয়ে সুবিচার পাবে? “Political pressure ” আর সুশিক্ষার অভাবে উন্নাও এর মতো অনেক ঘটনা হারিয়ে যাবে।

একটা শরীর জ্বলবে , বার বার জ্বলবে , কিন্তু সব দোষী “encounter ” এ মরবে না।

তাই অনুরোধ করছি, রুখে দাঁড়াও।  নিজের পাশে নিজে দাড়াও। হাতের মোমবাতিটা জ্বালিয়ে মিছিল করোনা , লাভ নেই।  ওই জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে জ্বালিয়ে দাও ওই পিশাচ গুলোকে ! নিজে না জ্বলে ওই অ্যাসিড ছুড়ে মারো ওই রাক্ষসগুলোর মুখে।

দেশ? বদলাবেনা ! তুমি বদলাও!